মহাকাশ বিজ্ঞান বৃহস্পতির মেরু অঞ্চলে অজানা রহস্য: চৌম্বকীয় টর্নেডো সৃষ্টি করছে অন্ধকার স্থান

বৃহস্পতির মেরু অঞ্চলে অজানা রহস্য: চৌম্বকীয় টর্নেডো সৃষ্টি করছে অন্ধকার স্থান

সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ 61

Jupiter Image

বৃহস্পতির মেরু অঞ্চলে এক অদ্ভুত এবং চমকপ্রদ আবিষ্কার হয়েছে, যা আমাদের সৌরজগতের একটি নতুন রহস্য উন্মোচন করেছে। যদিও বৃহস্পতির গ্রেট রেড স্পট পৃথিবীজুড়ে পরিচিত এবং দীর্ঘদিন ধরে এটি গ্রহটির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে, কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতির মেরু অঞ্চলে দুটি বিশাল অন্ধকার ডিম্বাকৃতির স্থান আবিষ্কার করেছেন, যেগুলি একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অন্ধকার স্থানগুলো দেখতে হুবহু পৃথিবীর অরোরা বা উত্তর ও দক্ষিণ আকাশে দেখা যায় এমন সৌন্দর্যপূর্ণ আলোকসজ্জার মতো হলেও, এর উত্স এবং কার্যপ্রণালী সম্পূর্ণ ভিন্ন।

এই অন্ধকার স্থানগুলো শুধু আলট্রাভায়োলেট (UV) রশ্মিতে দেখা যায়, যা আমাদের চোখে সাধারণত দৃশ্যমান নয়। বৃহস্পতির মেরু অঞ্চলের স্ট্র্যাটোস্ফেরিক কুয়াশার মধ্যে ভেসে ওঠা এই অন্ধকার ডিম্বাকৃতির স্থানগুলো, যখন দেখা যায়, তখন সেগুলি প্রায় সর্বদা উজ্জ্বল অরোরাল অঞ্চলগুলোর নিচে অবস্থিত থাকে। এই অন্ধকার স্থানগুলো অতিরিক্ত UV শোষণ করে, যার ফলে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের চিত্রে এগুলো অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি অন্ধকার দেখায়। ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত হাবল টেলিস্কোপের ছবি বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, দক্ষিণ মেরুতে এই অন্ধকার ডিম্বাকৃতির স্থান প্রায় ৭৫% সময় দৃশ্যমান থাকে, কিন্তু উত্তর মেরুতে এটি মাত্র ১২% সময় দেখা যায়।

এই অন্ধকার স্থানগুলো প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে, কিন্তু তখন তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে ২০০০ সালে কাসিনি মহাকাশযান বৃহস্পতির কাছ দিয়ে যাওয়ার সময়ও উত্তর মেরুতে এই অন্ধকার স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করেছিল, কিন্তু তখনো সেগুলো গুরুত্ব পায়নি। তবে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ট্রয় টসুবোটা সম্প্রতি এই অন্ধকার ডিম্বাকৃতির স্থানগুলির উপর একটি বিস্তারিত গবেষণা করেছেন। তিনি ১৯৯৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে নেওয়া ছবিগুলির মাধ্যমে দক্ষিণ মেরুর ৮টি অন্ধকার UV স্থান (SUDO) এবং উত্তর মেরুর ২টি অন্ধকার UV স্থান (NUDO) চিহ্নিত করেছেন।

jupiter red spot

গবেষকরা এই অন্ধকার স্থানগুলোর সৃষ্টির কারণ খুঁজতে গিয়ে একটি নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। তারা বলছেন, বৃহস্পতির চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের শক্তিশালী গতি সৃষ্টির কারণে আকাশে একটি বিশেষ ধরনের ভরাট সৃষ্টি হচ্ছে, যা বায়ুমণ্ডলের উজ্জ্বল অংশ থেকে নিচে গড়িয়ে আসতে থাকে এবং মেরু অঞ্চলের কুয়াশাকে ঘন করে তোলে। ঠিক যেমন একটি টর্নেডো মাটি থেকে ধুলো উড়িয়ে নিয়ে আসে, তেমনই এই ভরাট বৃহস্পতির মেরু অঞ্চলে কুয়াশাকে একত্রিত করে এবং এই ঘন কুয়াশা অন্ধকার ডিম্বাকৃতির স্থান তৈরি করে। এই ধারণার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে, গবেষকরা দেখেছেন যে এই ভরাটের মাধ্যমে বড় ধরনের অন্ধকার স্থান তৈরি হয়, যা বিভিন্ন স্তরের মধ্যে মিশে যায় এবং এটি বায়ুমণ্ডলের মধ্যে গতিশীলতা সৃষ্টি করে।

গবেষকরা আরো জানিয়েছেন যে, এই অন্ধকার স্থানগুলোর কুয়াশার ঘনত্ব সাধারণ কুয়াশার তুলনায় প্রায় ৫০ গুণ বেশি, যা ইঙ্গিত দেয় যে এটি স্বাভাবিক রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফলে নয়, বরং সৃষ্টির জন্য চৌম্বকীয় গতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তৈরি হচ্ছে। এছাড়া, গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই অন্ধকার স্থানগুলোর গঠন প্রায় এক মাস সময় নিলেও, এগুলো এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে dissipate হয়ে যায়। এই সময় এবং স্থানগত ভিন্নতা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, এটি শুধু চৌম্বকীয় শক্তি থেকে উদ্ভূত এবং উচ্চ-শক্তির কণার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

এই গবেষণা সৌরজগতের বৃহৎ গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলীয় গঠন এবং গতিশীলতা সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও স্পষ্ট করবে। বিশেষ করে, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুনের মতো গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলীয় গঠন এবং এর পরিবর্তনগুলি কীভাবে পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে তা বুঝতে সাহায্য করবে। মহাশূন্যে আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলীয় বৈশিষ্ট্যগুলো যদি আমরা আরও গভীরভাবে বুঝতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে এক্সোপ্ল্যানেট বা অন্য কোনো গ্রহের বায়ুমণ্ডলীয় গঠন বিশ্লেষণ করাও সম্ভব হবে।

হাবল টেলিস্কোপের OPAL প্রকল্পের আওতায় এই গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো সৌরজগতের বাইরের গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডলীয় বৈশিষ্ট্য, গঠন এবং গতিশীলতা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ করা। গবেষকরা আশা করছেন, এই নতুন আবিষ্কার সৌরজগতের বৃহৎ গ্রহগুলোর মধ্যে বায়ুমণ্ডলীয় সম্পর্ক এবং তাদের ভূতাত্ত্বিক গঠন বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এই গবেষণা কেবল বৃহস্পতি গ্রহের উপরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আমাদের সৌরজগতের সব বৃহৎ গ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং তাদের পরিবেশকে বোঝার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

Comments

0 comments
Leave your comment
Article Image
এসএসসি জীববিজ্ঞান সকল বোর্ড প্রশ্ন ২০২২ | SSC Biology All Board Question 2022
১ দিন আগে
Article Image
এসএসসি জীববিজ্ঞান সকল বোর্ড প্রশ্ন ২০২১ | SSC Biology All Board Question 2021
১ দিন আগে
Article Image
এসএসসি জীববিজ্ঞান সকল বোর্ড প্রশ্ন ২০২০ | SSC Biology All Board Question 2020
১ দিন আগে
Article Image
এসএসসি জীববিজ্ঞান সকল বোর্ড প্রশ্ন ২০১৯ | SSC Biology All Board Question 2019
১ দিন আগে
Article Image
এসএসসি জীববিজ্ঞান সকল বোর্ড প্রশ্ন ২০১৮ | SSC Biology All Board Question 2018
১ দিন আগে
Article Image
এসএসসি জীববিজ্ঞান সকল বোর্ড প্রশ্ন ২০১৭ | SSC Biology All Board Question 2017
১ দিন আগে
Article Image
এসএসসি জীববিজ্ঞান সকল বোর্ড প্রশ্ন ২০১৬ | SSC Biology All Board Question 2016
১ দিন আগে
Article Image
এসএসসি জীববিজ্ঞান সকল বোর্ড প্রশ্ন ২০১৫ | SSC Biology All Board Question 2015
১ দিন আগে
Article Image
এসএসসি রসায়ন সকল বোর্ড প্রশ্ন ২০২৪ | SSC Chemistry All Board Question 2024
৫ দিন আগে